বর্তমানে অনেকেই তাদের সঞ্চয়ের টাকা সুরক্ষিত রাখার জন্য বিভিন্ন বিনিয়োগের উপায় খুঁজছেন। ব্যাংকের তুলনায় পোস্ট অফিসের কিছু স্কিম অনেক বেশি লাভজনক হতে পারে। বিশেষ করে যাঁরা সুরক্ষিতভাবে টাকা জমা রাখতে চান এবং নির্দিষ্ট সময়ে ভালো রিটার্ন পেতে চান, তাঁদের জন্য পোস্ট অফিসের ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট (NSC Scheme) স্কিম একটি আদর্শ বিকল্প।
Post Office NSC Scheme: কীভাবে কাজ করে
পোস্ট অফিসের NSC স্কিম একটি সরকারি সঞ্চয় স্কিম, যা নিরাপদ এবং লাভজনক হিসেবে পরিচিত। এটি একটি মেয়াদী জমা স্কিম, যেখানে ৫ বছরের জন্য টাকা জমা রাখা যায়। আপনি চাইলে ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে যত টাকা খুশি বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে, আজকের আলোচনায় আমরা ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগের হিসাব দেখব।
মেয়াদ ও সুদের হারঃ NSC স্কিমে ৫ বছরের জন্য বিনিয়োগ করলে বার্ষিক ৭.৭ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যায়। সুদের হার সরকারের নির্ধারণ অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে, তবে বর্তমানে এটি ৭.৭ শতাংশে স্থিত রয়েছে। এই সুদ হার পোস্ট অফিসের অন্যান্য স্কিমের তুলনায় বেশ ভালো।
Also Read: লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের টাকা ফেরত দিতে হবে? পশ্চিমবঙ্গের মহিলাদের জন্য কি বার্তা।
৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগের পর ৫ বছরে কত টাকা রিটার্ন পাবেন
আপনি যদি ৫০ হাজার টাকা এককালীন NSC স্কিমে বিনিয়োগ করেন, তবে ৫ বছরের শেষে আপনি মোট ৭২,৪৫২ টাকা পাবেন। এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকা আপনার মূলধন এবং ২২ হাজার ৪৫২ টাকা সুদ। এই রিটার্নের হিসাব সহজেই বোঝা যায়, কারণ এখানে সুদ দেওয়া হয় চক্রবৃদ্ধি হারে।
এই হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, আপনি যে টাকা বিনিয়োগ করেছেন, তা ৫ বছরে প্রায় ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। পোস্ট অফিসের NSC স্কিমে বিনিয়োগ করা টাকা সুরক্ষিত থাকে, কারণ এটি সরকারের দ্বারা সমর্থিত। তাই, সুদের হার ও রিটার্নের বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকা যায়।
কেন NSC স্কিমে বিনিয়োগ করবেন
- নিরাপত্তা: পোস্ট অফিসের এই স্কিম পুরোপুরি সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাই আপনার বিনিয়োগ সুরক্ষিত।
- আকর্ষণীয় সুদ হার: বর্তমান বাজারে অনেকেই কম সুদের সমস্যায় ভুগছেন। সেখানে NSC স্কিমের ৭.৭% সুদ অনেকটাই আকর্ষণীয়।
- চক্রবৃদ্ধি সুদ: এখানে সুদ প্রতি বছর যোগ হয়, যা চক্রবৃদ্ধি আকারে বৃদ্ধি পায়। ফলে ৫ বছরের শেষে আপনি একটি বড় অঙ্কের রিটার্ন পান।
- ট্যাক্স বেনিফিট: এই স্কিমে বিনিয়োগ করলে ৮০সি ধারার অধীনে আয়করের ছাড় পাওয়া যায়। তবে, সুদে প্রাপ্ত আয় করযোগ্য হতে পারে, তাই সঠিক পরামর্শ নিয়ে বিনিয়োগ করা উচিত।
- সাধারণ জনগণের জন্য উপযোগী: ১৮ বছর বয়সোর্ধ্ব যে কেউ এই স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারেন। এমনকি ১৮ বছরের নিচে বাচ্চাদের নামেও অবিভাবকরা অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।
NSC স্কিমে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া
NSC স্কিমে অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে প্রথমে আপনার নিকটবর্তী পোস্ট অফিসে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে। এই ফর্মটি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। ফর্মের সাথে আপনার আধার কার্ড, প্যান কার্ড এবং পাসপোর্ট সাইজ ছবি জমা করতে হবে।
অনলাইনে ফর্ম ডাউনলোড করার সুবিধাও রয়েছে। ফর্ম পূরণ করে জমা দেওয়ার পর পোস্ট অফিস আপনার অ্যাকাউন্ট খুলে দেবে। অ্যাকাউন্ট খোলার পর, আপনি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা করে রসিদ পাবেন। এই রসিদটি সংরক্ষণ করতে হবে, কারণ এটি আপনার বিনিয়োগের প্রমাণপত্র হিসেবে কাজ করবে।
স্কিমের নাম | আবেদন পত্রের পিডিএফ |
---|---|
পোস্ট অফিস সেভিংস একাউন্ট (POSB) | Download Application Form |
ফিক্সড ডিপোজিট (FD) | Download Application Form |
রেকারিং ডিপোজিট (RD) | Download Application Form |
মান্থলি ইনকাম স্কিম (MIS) | Download Application Form |
সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা (SSY) | Download Application Form |
মহিলা সম্মান সেভিংস সার্টিফিকেট (MSSC) | Download Application Form |
সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম (SCSS) | Download Application Form |
কিষান বিকাশ পত্র (KVP) | Download Application Form |
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (PPF) | Download Application Form |
ন্যাশেনাল সেভিংস সার্টিফিকেট (NSC) | Download Application Form |
ডাক জীবন বীমা (PLI) | Download Pdf |
গ্রামীন ডাক জীবন বীমা (RPLI) | Download Pdf |
NSC স্কিমের সুবিধা
- টাকা তুলতে সুবিধা: ৫ বছর মেয়াদ শেষে আপনি পোস্ট অফিস থেকে আপনার টাকা তুলতে পারবেন। প্রয়োজন হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পুনরায় বিনিয়োগও করতে পারেন।
- ট্যাক্স সুবিধা: NSC স্কিমে বিনিয়োগ করে আপনি আয়করে ছাড় পেতে পারেন, যা আপনার সঞ্চয়ের জন্য একটি ভালো সুবিধা।
- নির্ধারিত রিটার্ন: পোস্ট অফিসের এই স্কিমে রিটার্ন নির্ধারিত থাকে, তাই বাজারের ওঠানামার প্রভাব পড়ে না।
- জমা-আসলের নিরাপত্তা: এখানে জমা করা মূলধন পুরোপুরি সুরক্ষিত থাকে, কারণ এটি সরকারের দ্বারা পরিচালিত।
- বিনিয়োগের সহজ প্রক্রিয়া: NSC স্কিমে বিনিয়োগ করার প্রক্রিয়া খুব সহজ। পোস্ট অফিসে গিয়ে সরাসরি অ্যাকাউন্ট খুলে বিনিয়োগ করা যায়।
Also Read: Income Tax Return পেতে দেরি হলে সরকার দেবে সুদ! কীভাবে পাবেন এই সুবিধা।
NSC স্কিমের সীমাবদ্ধতা
যদিও NSC স্কিম অনেক সুবিধা প্রদান করে, তবুও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:
- টাকা তুলতে সীমাবদ্ধতা: ৫ বছরের আগে টাকা তোলা যায় না। জরুরি প্রয়োজনে টাকা তোলার ব্যবস্থা নেই।
- সুদের করযোগ্যতা: এখানে প্রাপ্ত সুদ করযোগ্য। তাই কর ছাড়ের পাশাপাশি সুদে করের হিসাবও রাখতে হবে।
- বাজারের তুলনায় কম রিটার্ন: যদিও সুদ হার ভালো, তবে কিছু বিনিয়োগের তুলনায় এটি কম হতে পারে।
এই সীমাবদ্ধতাগুলো সত্ত্বেও, NSC স্কিম সুরক্ষিত বিনিয়োগের জন্য একটি ভালো বিকল্প। যারা কম ঝুঁকিতে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করতে চান, তাঁদের জন্য এটি উপযুক্ত।
কেন এই মুহূর্তে NSC স্কিমে বিনিয়োগ করবেন?
বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে অনেকেই নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন। ব্যাংক সুদ কমে যাওয়ায় পোস্ট অফিসের NSC স্কিম আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করতে চান এবং ভবিষ্যতে ভালো রিটার্ন পেতে চান, তাঁদের জন্য এটি একটি ভালো সুযোগ।
এই স্কিমের বিশেষত্ব হলো, এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। আপনি ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে হলে সহজেই এই স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারেন। এমনকি ছোটদের জন্যও এই সুবিধা রয়েছে।
পোস্ট অফিসের NSC স্কিম সুরক্ষিত এবং লাভজনক বিনিয়োগের জন্য একটি আদর্শ বিকল্প। এটি একদিকে সঞ্চয়ের নিরাপত্তা দেয়, অন্যদিকে ভালো রিটার্নও প্রদান করে। ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ৫ বছরের শেষে আপনি ৭২,৪৫২ টাকা রিটার্ন পাবেন, যা বর্তমান বাজারের তুলনায় বেশ ভালো। তাই, যারা নিরাপদ এবং লাভজনক বিনিয়োগ করতে চান, তাঁদের জন্য পোস্ট অফিসের এই স্কিম বিবেচনা করা উচিত।
এই স্কিমে বিনিয়োগ করার জন্য আপনার নিকটবর্তী পোস্ট অফিসে যোগাযোগ করুন এবং আজই আপনার ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় শুরু করুন।