নতুন একটি জল্পনা উঠে এসেছে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের টাকা ফেরত দিতে হবে? পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আজ একটি বিতর্কিত অধ্যায়ের সংযোজন হলো। রাজ্যের নারীদের জন্য চালু হওয়া অন্যতম জনপ্রিয় প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার‘ (Lakshmir Bhandar Scheme) নিয়ে উঠেছে নতুন বিতর্ক। এই প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের মহিলারা প্রতি মাসে ১০০০ এবং ১২০০ টাকা করে ভাতা পেয়ে আসছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই প্রকল্পের তালিকা থেকে অনেক মহিলাকে বাদ দেওয়া হতে পারে এবং তাঁদের এতদিন পাওয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে থাকা কারণ নিয়ে রাজ্যের মহিলারা উদ্বিগ্ন। তাঁদের প্রশ্ন, কেন হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত? এর সঙ্গে রাজ্যের সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাপ্রবাহের কি কোনো যোগসূত্র আছে?
লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের টাকা ফেরত দিতে হবে?
কিছুদিন আগে, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে (RG Kar Case) ঘটে যাওয়া একটি নারী নির্যাতনের ঘটনা রাজ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যজুড়ে নারী নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠন সরব হয়ে উঠেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলি। নির্যাতিতার মা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “যাঁরা কন্যাশ্রী বা লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধা নেন, তাঁদের আগে নিশ্চিত হওয়া উচিত, ঘরের লক্ষ্মী সুরক্ষিত কি না।”
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিরোধী দলগুলি সরকারের প্রকল্পগুলিকে প্রচারের মাধ্যম হিসেবে দোষারোপ করছে এবং দাবি করেছে যে, এই প্রকল্পগুলি মানুষের প্রকৃত কল্যাণের জন্য নয়, বরং ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য চালু করা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিতর্ক ও কুণাল ঘোষের মন্তব্য
এই পরিস্থিতির মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “যাঁরা লক্ষ্মীর ভান্ডার এবং অন্যান্য সরকারি প্রকল্পে থাকতে চান না, তাঁদের ফেরত দেওয়ার জন্য ফর্ম দেওয়া উচিত। দুয়ারে সরকার শিবিরে ফেরত কাউন্টার থাকা উচিত।” এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কুণাল ঘোষের এই মন্তব্যকে অনেকেই রাজনৈতিক প্রতিশোধের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। তাঁর এই বক্তব্যে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ আরও প্রকট হয়েছে।
বিজেপির প্রতিক্রিয়া
বিজেপি, যা রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল, তৃণমূলের এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে। বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “তৃণমূলের রাজনীতি মানুষকে পণ্য বানানোর রাজনীতি। মহিলাদের ভোট আর আবেগ কিনতেই এই প্রকল্প সরকার চালু করেছিল।” তিনি আরও বলেন, “এই প্রকল্পে নারীদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। যখন জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে, তখন তারা প্রকল্পের সুবিধা বাতিল করার এবং পাওয়া অর্থ ফেরত নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এটি রাজনৈতিক প্রতিশোধের একটি কৌশল মাত্র।”
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই ধরনের মন্তব্য এবং পদক্ষেপগুলি রাজ্য সরকারের জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন করার জন্য করা হচ্ছে। তাঁদের মতে, সরকারের এই পদক্ষেপে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। অনেকেই এই ঘটনাকে রাজ্যের ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিবেশের একটি সূচক হিসেবে দেখছেন।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
এখন পর্যন্ত রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। তবে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরজি করের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এবং এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কেন্দ্রের কাছে কঠোর আইন প্রণয়নের আবেদন করেছেন।
কিন্তু রাজ্যের মানুষ এই ঘটনার জন্য মূলত রাজ্য সরকারকেই দায়ী করছে। বিশেষ করে, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধাভোগী মহিলারা সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, এই প্রকল্পের অধীনে প্রাপ্ত অর্থ তাদের পরিবারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই অর্থ ফেরত দিতে বলা হলে তাদের জীবনযাত্রা বিপন্ন হবে।
শেষ মতামত
রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে অত্যন্ত উত্তপ্ত। লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প নিয়ে এই বিতর্ক রাজ্য সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তা সরকারের ভবিষ্যত নীতি প্রণয়নে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। আগামী দিনে এই পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করবে সরকার, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে, একটি বিষয় নিশ্চিত, রাজ্যের মহিলাদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত কঠিন সময়। তাঁদের বর্তমান অবস্থার উন্নতির জন্য সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, তা সময়ই বলে দেবে। পোস্ট অফিস স্কিম সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত।