জন্মাষ্টমী সনাতন (হিন্দু) ধর্মের অন্যতম প্রধান উৎসব। এটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন হিসেবে পালিত হয়। জন্মাষ্টমী 2024 সময়সূচি হচ্ছে ২০২৪ সালে জন্মাষ্টমী উদযাপন হবে ২৬ আগস্ট, সোমবার। এই দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মের মুহূর্তকে স্মরণ করে। সারা ভারত ও বাংলাদেশে এই দিনটি অত্যন্ত আনন্দ ও ভক্তি সহকারে পালিত হয়।
জন্মাষ্টমীর ইতিহাস পুরাণে ভরপুর। ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ‘অধর্মের বিনাশকারী‘ এবং ‘ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী‘ হিসেবে মানেন। তাঁর জন্ম কংসের কারাগারে। কংস ছিলেন অত্যন্ত দুষ্ট রাজা, এবং তাঁর নিষ্ঠুরতা পুরো রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল কংসের বিনাশ এবং ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য।
জন্মাষ্টমী 2024 সময়সূচি – কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী
জন্মাষ্টমী তিথি | সময় |
অষ্টমী তিথি শুরু | ২৬ অগস্ট ২০২৪, ভোর ৩টে ৪০ মিনিটে |
অষ্টমী তিথি সমাপ্ত | ২৭ অগস্ট ২০২৪, সকাল ২টো ২০ মিনিটে |
এই বছর ভাদ্রপদ মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথি পড়ছে ২৬ অগস্ট ২০২৪। ২৬ তারিখ মাঝরাতে কৃষ্ণ পুজো হবে। |
কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর পুজো | রাত ১২টা থেকে ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত। পুজোর জন্য ৪৫ মিনিট সময়। |
ব্রতভঙ্গ | ২৭ অগস্ট ২০২৪ সকাল ১১টা পর্যন্ত |
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সারা দেশে, বিশেষ করে মন্দিরগুলোতে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়। বিভিন্ন মন্দির শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন লীলার চিত্র প্রদর্শন করে। এই দিনটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্য বিশেষ আরতি, ভজন, এবং অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করা হয়।
মন্দিরগুলোতে শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি বা ছবি ফুল দিয়ে সাজানো হয়। ভক্তরা ভোর থেকে মন্দিরে ভিড় জমান। সকালে শুরু হয় প্রথম আরতি, যেখানে শ্রীকৃষ্ণের মূর্তিকে দুধ, মধু, ঘি, চিনি ও পানির সংমিশ্রণে স্নান করানো হয়। তারপর, সারা দিন জুড়ে ভজন-কীর্তনের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করা হয়।
জন্মাষ্টমীর বিশেষ দিনে অনেক ভক্ত উপবাস করেন। শ্রীকৃষ্ণের জন্মক্ষণে উপবাস ভঙ্গ করে তাঁরা ভোগ নিবেদন করেন। এই ভোগে সাধারণত বিভিন্ন মিষ্টি ও ফলমূল থাকে, যা পরবর্তীতে প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়।
শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে দধিকাদী উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই উৎসবে দুধের হাড়ি ভাঙার প্রতিযোগিতা হয়। এটি শ্রীকৃষ্ণের বাল্যকালের দুষ্টুমির প্রতীক। শ্রীকৃষ্ণ ছোটবেলায় গোপীদের দুধ ও দই চুরি করতেন। তাই এই রীতি সারা দেশে বিশেষভাবে উদযাপিত হয়।
জন্মাষ্টমীর সময়সূচি শুরু হয় ভোরের আরতি থেকে। এরপর সারা দিন বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যক্রম চলে। সন্ধ্যার দিকে মন্দিরগুলোতে বিশাল ভক্তসমাগম হয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম মুহূর্তে মধ্যরাতের আরতি হয়, যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় ভক্তরা শ্রীকৃষ্ণের নাম জপে এবং ভজন-কীর্তনে মগ্ন থাকেন।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিভিন্ন গণমাধ্যমও বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে শ্রীকৃষ্ণের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে নাটক ও অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়। এছাড়া, রেডিও এবং অন্যান্য মাধ্যমেও শ্রীকৃষ্ণের জীবনী ও ভজন পরিবেশন করা হয়।
জন্মাষ্টমী শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একটি সংস্কৃতি। এটি মানুষকে ভালোবাসা, ভক্তি এবং বিশ্বাসের মর্ম বোঝায়। ২০২৪ সালের জন্মাষ্টমী আরও একবার আমাদেরকে শ্রীকৃষ্ণের আদর্শে উদ্দীপ্ত করবে এবং আমাদের সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সহায়ক হবে। আসন্ন জন্মাষ্টমী উৎসবটি সবার জন্য আনন্দ ও ভক্তিতে পূর্ণ হোক। শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদ আমাদের সকলের ওপর বর্ষিত হোক।
জন্মাষ্টমী কিভাবে পালন করতে হয়
জন্মাষ্টমীর প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই শুরু হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ঘরবাড়ি পরিষ্কার করেন। মন্দিরগুলোও সুন্দরভাবে সাজানো হয়। অনেকেই তাদের ঘরকে ফুল দিয়ে সাজান। এটি একটি মহৎ দিন বলে অনেকেই উপবাস করেন। অনেক মন্দিরে বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়।
উপবাস এবং পূজা
জন্মাষ্টমীর দিনে উপবাস করা একটি সাধারণ প্রথা। ভক্তরা সারাদিন উপবাসে থাকেন এবং শুধুমাত্র ফল ও দুধ গ্রহণ করেন। পূজার সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মূর্তির সামনে প্রণাম করে ফুল, ফল, মিষ্টি এবং দুধ নিবেদন করা হয়। মন্দিরে বা বাড়িতে ভগবানের মূর্তিকে স্নান করানো হয় এবং তাকে নতুন পোশাক পরানো হয়। সারা রাত ধরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মক্ষণ পর্যন্ত ভক্তরা প্রার্থনা করেন।
শ্রীকৃষ্ণের জন্মক্ষণ মধ্যরাতে হয়েছিল বলে, এই সময়কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। মধ্যরাতে, শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি একটি দোলায় রাখা হয় এবং ভক্তরা গান গেয়ে এবং প্রার্থনা করে এই মুহূর্তটি উদযাপন করেন। মন্দিরে বা বাড়িতে ভক্তরা আরতি করেন এবং মন্ত্র পাঠ করেন। এরপর প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
দণ্ড মহোৎসব
জন্মাষ্টমীর অন্যতম আকর্ষণীয় অংশ হলো দণ্ড মহোৎসব। এটি শ্রীকৃষ্ণের মাখন চুরির কাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত। যুবকেরা একটি উঁচু দণ্ডে বাঁধা মাটির হাঁড়ি ভাঙার চেষ্টা করেন। এই হাঁড়ি মাখন বা দই দিয়ে ভরা থাকে। দলের মধ্যে একজন ব্যক্তি উঁচুতে উঠে হাঁড়ি ভাঙার চেষ্টা করে, এবং বাকিরা তাকে সাহায্য করে। এটি অত্যন্ত আনন্দদায়ক একটি খেলা, এবং প্রচুর দর্শক তা উপভোগ করেন।
কীর্তন এবং ভজন
জন্মাষ্টমীর সময় কীর্তন এবং ভজন গাওয়া একটি সাধারণ প্রথা। ভক্তরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গুণকীর্তন করেন। মন্দিরে বা বাড়িতে ভজনের আসর বসে। ভক্তরা দলবদ্ধভাবে ভজন গায় এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি তাদের ভক্তি নিবেদন করেন। এটি ভক্তদের মনকে পবিত্র করে এবং ভগবানের সঙ্গে যুক্ত হতে সাহায্য করে।
প্রসাদ বিতরণ
জন্মাষ্টমীর দিন প্রসাদ বিতরণ করা হয়। পূজার শেষে প্রসাদ হিসেবে মিষ্টি, ফল, এবং অন্যান্য খাবার বিতরণ করা হয়। ভক্তরা এই প্রসাদ গ্রহণ করেন এবং তাদের ভগবানের আশীর্বাদ হিসেবে মনে করেন। অনেক মন্দিরে প্রসাদ বিতরণের জন্য বিশেষ আয়োজন করা হয়। অনেকেই এই দিনে দান-ধর্ম করেন এবং দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেন।
সামাজিক অনুষ্ঠান
জন্মাষ্টমী শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সামাজিক একতার প্রতীকও। এই দিনে বিভিন্ন স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নাটক, গান, নৃত্য, এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনী নিয়ে বিভিন্ন প্রদর্শনী হয়। এসব অনুষ্ঠানে শিশু এবং যুবকেরা অংশগ্রহণ করে। এটি একটি আনন্দময় এবং শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে।
AjkerWb এর অফিসিয়াল হোয়াটসয়াপ পেইজটি ফলো করুন।
উপসংহার
জন্মাষ্টমী শুধুমাত্র ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন নয়, এটি ভক্তদের জন্য একত্রিত হওয়ার একটি বিশেষ দিন। ভক্তি, প্রার্থনা, এবং আনন্দের মাধ্যমে এই দিনটি উদযাপিত হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি অত্যন্ত পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। জন্মাষ্টমী উদযাপন করে ভক্তরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি তাদের ভক্তি এবং ভালোবাসা প্রকাশ করেন। ধর্ম সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্য জানতে আমাদের মূলপাতা ভিজিট করুন।