পুজোর আগে পশ্চিমবঙ্গে দুর্গার ভান্ডার প্রকল্প: রাজ্যের দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তবে এ বছর পুজোর আগে পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে এক বিতর্ক শুরু হয়েছে। রাজ্য সরকার ঘোষিত ‘দুর্গার ভান্ডার’ প্রকল্পের অনুদান নিয়ে বিভাজন তৈরি হয়েছে পুজো কমিটিগুলোর মধ্যে। সম্প্রতি আর জি কর মেডিকেল কলেজের এক ঘটনায় রাজ্যজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনার পর অনেক পুজো কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা এবছর সরকারের অনুদান নেবে না। অন্যদিকে, কিছু পুজো কমিটি এই অনুদান নিতে ইচ্ছুক। এর ফলে রাজ্যের পুজো কমিটিগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে।
আর জি কর মেডিকেল কলেজে ঘটে যাওয়া এক ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের পর সারা রাজ্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সমগ্র রাজ্যবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। দ্রুত বিচার না হওয়া এবং দোষীদের বাঁচানোর অভিযোগে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতা চলছে। এই ঘটনার পর থেকেই রাজ্যের অনেক পুজো কমিটি সরকারি অনুদান গ্রহণের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করেছে। তারা মনে করছে, এই অনুদান গ্রহণ করলে জনগণের ক্ষোভের মুখে পড়তে হতে পারে। ফলে তারা সরকারের দেওয়া অনুদান থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
হুগলি জেলার পুজো কমিটিগুলির অবস্থা
হুগলি জেলার পুজো কমিটিগুলির মধ্যে ‘দুর্গার ভান্ডার’ প্রকল্পের অনুদান নিয়ে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অনেক পুজো কমিটি ইতিমধ্যেই সরকারি অনুদান প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল উত্তরপাড়া এবং কোন্নগরের কিছু পুজো কমিটি। এই কমিটিগুলো জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছে যে তারা এই অনুদান নেবে না। তারা মনে করছে, এই অনুদান গ্রহণ করলে জনসাধারণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
পুজোর আগে পশ্চিমবঙ্গে দুর্গার ভান্ডার প্রকল্প
কোন্নগরের পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন দাস অনুদান নিতে আগ্রহী পুজো কমিটিগুলিকে জমায়েত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চলচ্চিত্রম মোড় এলাকায় এই জমায়েত হওয়ার কথা। তবে এই জমায়েত নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হয়েছে যে, আরজি কর কাণ্ডে নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকে দমিয়ে দেওয়ার জন্য এই জমায়েত ডাকা হয়েছে। স্থানীয় বিজেপি নেতা প্রণয় রায় অভিযোগ করেছেন, পুরপ্রধান সরকারি অনুদানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছেন। এতে রাজ্যের পুজো কমিটিগুলোর মধ্যে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে।
‘দুর্গার ভান্ডার’ প্রকল্পের ইতিহাস
‘দুর্গার ভান্ডার’ প্রকল্পটি ২০১৭-১৮ সালে শুরু হয়েছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজ্যের দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। প্রথমদিকে অনুদানের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার টাকা, যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৮৫ হাজার টাকা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণায় এবছর এই অনুদান আরও বৃদ্ধি পেয়ে ৮৫ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। তবে আর জি কর ঘটনার পর এই অনুদান নিয়ে অনেক পুজো কমিটি দ্বিধায় পড়েছে। কিছু কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা এই অনুদান গ্রহণ করবে না, যা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ এবং ‘দুর্গার ভান্ডার’ প্রকল্প
- ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পটি ২০২১ সালে শুরু হয়েছিল, যা মহিলাদের মাসিক ভাতা হিসেবে প্রদান করা হয়।
- অন্যদিকে, ‘দুর্গার ভান্ডার’ প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর পুজোর আগে এককালীন অনুদান প্রদান করা হয়।
- পুজো কমিটিগুলিকে এই অনুদানের জন্য নির্দিষ্ট পোর্টালে আবেদন করতে হয় এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিতে হয়। তবে এবছর আর জি কর ঘটনার প্রভাব এই অনুদান গ্রহণের ক্ষেত্রে দ্বিধার সৃষ্টি করেছে।
পুজো কমিটিগুলির দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনা
এই অনুদান নিয়ে রাজ্যের পুজো কমিটিগুলির মধ্যে যে বিভাজন তৈরি হয়েছে, তা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশে উত্তেজনা তৈরি করেছে। কিছু কমিটি যেখানে অনুদান নিতে আগ্রহী, সেখানে অনেক কমিটি এই অনুদান থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিজেপি অভিযোগ করছে যে, রাজ্য সরকার এই অনুদানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। অন্যদিকে, তৃণমূল সরকারের দাবি যে, এই অনুদান শুধুমাত্র পুজো কমিটিগুলির আর্থিক সহায়তার জন্য দেওয়া হচ্ছে। তবে এই পরিস্থিতি রাজ্যের পুজো কমিটিগুলির মধ্যে এক নতুন দ্বন্দ্ব এবং উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
রাজ্যের দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তবে এ বছর পুজোর আগে ‘দুর্গার ভান্ডার’ প্রকল্পের অনুদান নিয়ে যে বিভাজন তৈরি হয়েছে, তা রাজ্যের পুজো কমিটিগুলির মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। আর জি কর ঘটনার পর অনেক পুজো কমিটি সরকারি অনুদান গ্রহণের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করছে। অন্যদিকে, কিছু কমিটি এই অনুদান নিতে আগ্রহী। এর ফলে রাজ্যের পুজো কমিটিগুলির মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং উত্তেজনা বাড়ছে।
এই প্রবন্ধটি সংক্ষেপে রাজ্যের পুজো কমিটিগুলির মধ্যে ‘দুর্গার ভান্ডার’ প্রকল্পের অনুদান নিয়ে যে বিভাজন এবং উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা করেছে। বর্তমান পরিস্থিতি কতটা গভীর হবে এবং এর প্রভাব রাজ্যের পুজো কমিটিগুলির উপর কতটা পড়বে, তা সময়ই বলবে।