Small Cap Mutual Fund: বর্তমান সময়ে অনেকেই তাদের সঞ্চিত অর্থকে বহুগুণে বৃদ্ধি করতে চান। এই উদ্দেশ্যে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের গুরুত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা শেয়ারবাজারের তুলনায় ঝুঁকির পরিমাণ কম বলে বিবেচিত হয়। তাই আপনি যদি আপনার অর্থকে সঠিকভাবে এবং সুরক্ষিতভাবে বৃদ্ধি করতে চান, মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ আপনার জন্য একটি উত্তম উপায় হতে পারে।
মিউচুয়াল ফান্ডে দুইভাবে বিনিয়োগ করা যায়: SIP (Systematic Investment Plan) বা Lumpsum। মিউচুয়াল ফান্ডেরও বিভিন্ন ধরন রয়েছে, যেমন: লার্জ ক্যাপ, মিড ক্যাপ, এবং স্মল ক্যাপ। এই প্রবন্ধে আমরা স্মল ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ডের বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করব। আপনি জানতে পারবেন কীভাবে স্মল ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ড কাজ করে, এর সুবিধা ও অসুবিধা, এবং কারা এ ধরনের ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। এছাড়াও, আমরা ভারতের কিছু শীর্ষ স্মল ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ডের তালিকাও প্রদান করব।
আরও পড়ুন: Post Office NSC Scheme: ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগে ৫ বছরে যত টাকা রিটার্ন পাবেন।
Small Cap Mutual Fund কী ?
স্মল ক্যাপ কোম্পানি সম্পর্কে ২০১৮ সালের আগে ভিন্ন ধরণের ধারণা প্রচলিত ছিল। তবে ২০১৮ সালে ভারতের SEBI (Securities and Exchange Board of India) স্মল ক্যাপ কোম্পানির সংজ্ঞা নির্ধারণ করে। তারা মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন অনুসারে কোম্পানিগুলিকে বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করে দেয়। ২৫১তম স্থানের পর থেকে যে কোম্পানিগুলি রয়েছে, সেগুলিকে স্মল ক্যাপ কোম্পানি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
- লার্জ ক্যাপ কোম্পানি: মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন অনুযায়ী ১ থেকে ১০০তম কোম্পানিগুলি।
- মিড ক্যাপ কোম্পানি: মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন অনুযায়ী ১০১ থেকে ২৫০তম কোম্পানিগুলি।
- স্মল ক্যাপ কোম্পানি: মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন অনুযায়ী ২৫১তম স্থানের পর থেকে যে কোম্পানিগুলি রয়েছে।
স্মল ক্যাপ কোম্পানিগুলির বার্ষিক রাজস্ব সাধারণত ৭,০০০ কোটি টাকার নিচে হয়। আপনি যদি এই ধরনের ছোট কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে চান, তবে স্মল ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ডই হবে আপনার পছন্দের পথ।
কারা স্মল ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করবেন?
স্মল ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে সব বিনিয়োগকারীর জন্য এটি উপযুক্ত নয়। নিচে কিছু বিনিয়োগকারীর প্রোফাইল দেওয়া হল, যাদের জন্য এই ধরনের ফান্ড উপযুক্ত হতে পারে:
- যারা ফিক্সড ডিপোজিট থেকে বেশি রিটার্ন চান।
- যারা শর্ট টার্ম বিনিয়োগ না করে লং টার্ম বিনিয়োগ করতে চান।
- যারা বাজারের পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা রাখেন এবং সঠিক সময়ে বিনিয়োগ করতে সক্ষম।
- যারা বাজারের ওঠানামা সম্পর্কে অবগত এবং সঠিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেন।
স্মল ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে আপনার বড় অঙ্কের লাভ হতে পারে, তবে ভুল সময়ে বিনিয়োগ করলে বড় অঙ্কের ক্ষতিও হতে পারে। তাই বিনিয়োগ করার আগে বাজারের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরি।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের টাকা ফেরত দিতে হবে? পশ্চিমবঙ্গের মহিলাদের জন্য কি বার্তা।
স্মল ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের সঠিক অংশ
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তবে এটি সঠিকভাবে পরিচালনা করলে ফলপ্রসূ হতে পারে। আপনার বিনিয়োগের পোর্টফোলিয়োর সর্বোচ্চ ১৫-২০ শতাংশ স্মল ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা উচিত। এর বেশি বিনিয়োগ করলে ঝুঁকির পরিমাণ বেড়ে যায়।
স্মল ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ডের সুবিধা
স্মল ক্যাপ কোম্পানিগুলিতে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। নিচে আমরা সেগুলি তুলে ধরেছি:
- কম মূল্য: স্মল ক্যাপ স্টকের মূল্য লার্জ ক্যাপ এবং মিড ক্যাপ স্টকের তুলনায় কম।
- বৃদ্ধির সম্ভাবনা: স্মল ক্যাপ কোম্পানিগুলি তাদের বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে, তাই অধিক পরিমাণে রিটার্নের সম্ভাবনা থাকে।
- বৈচিত্র্যপূর্ণ পোর্টফোলিও: কম মূল্য হওয়ায় বিভিন্ন স্টকে বিনিয়োগ করা সম্ভব, যা পোর্টফোলিওকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করে।
- বিকাশের সুযোগ: লার্জ ক্যাপ কোম্পানিগুলি বিকাশের শীর্ষে থাকলেও, স্মল ক্যাপ কোম্পানিগুলির বিকাশের অনেক সুযোগ রয়েছে।
- রিটার্নের সম্ভাবনা: স্মল ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ডে উচ্চ রিটার্ন পাওয়ার আশা বেশি থাকে।
স্মল ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ডের অসুবিধা
যেমন সুবিধা রয়েছে, তেমনই স্মল ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের কিছু অসুবিধাও রয়েছে:
- অস্থিরতা: স্মল ক্যাপ স্টকগুলি লার্জ ক্যাপ এবং মিড ক্যাপ স্টকের তুলনায় বেশি অস্থির।
- টাকার মূল্য কমার ঝুঁকি: শেয়ার বাজারে টাকার মূল্য কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
- বাজারের পরিবর্তন: বাজারের মূল্য কমতে থাকলে, স্মল ক্যাপ কোম্পানির মূল্য দ্রুত কমে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালে কোভিডের সময় লার্জ ক্যাপ কোম্পানিগুলোর তুলনায় স্মল ক্যাপ কোম্পানির মূল্য অনেক দ্রুত কমেছিল। তবে, পুনরুদ্ধারের সময়ে তারা দ্রুত পুনরুদ্ধারও করেছে।
আরও পড়ুন: Income Tax Return পেতে দেরি হলে সরকার দেবে সুদ! কীভাবে পাবেন এই সুবিধা।
স্মল ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার আগে অবশ্যই বিনিয়োগের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া উচিত। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বাজার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা গুরুত্বপূর্ণ। বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সঠিকভাবে পরিচালনা করলে স্মল ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ড আপনার জন্য লাভজনক হতে পারে।
স্মল ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা হতে পারে একটি লাভজনক উপায়, তবে এটি সবার জন্য উপযুক্ত নয়। আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন এবং বাজারের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত থাকেন, তবে স্মল ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ড আপনার জন্য লাভজনক হতে পারে। তবে, বিনিয়োগের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকাও জরুরি। বাজারের পরিবর্তন এবং মূল্যহ্রাসের সময় সতর্ক থাকতে হবে।
এই প্রবন্ধে আমরা স্মল ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশাকরি, এটি আপনার বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হবে। বিনিয়োগ করার আগে সবসময় নিজের অর্থনৈতিক অবস্থার মূল্যায়ন করুন এবং সঠিক পরামর্শ নিন। স্মল ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে আপনি আপনার অর্থকে সঠিকভাবে বৃদ্ধি করতে পারবেন, তবে বাজার সম্পর্কে সচেতন থাকাটা জরুরি।