HS Exam Calculator Use: পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবর্তনের ধারায় একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে উচ্চ মাধ্যমিক সেমিস্টার পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের (WBCHSE Board) পক্ষ থেকে ২০২৪ সালের জন্য নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে, শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও, এটি শিক্ষার মান উন্নয়নের উদ্দেশ্যে গৃহীত একটি কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
HS Exam Calculator Use (ক্যালকুলেটর নিষিদ্ধের পটভূমি)
গত কয়েক বছর ধরে দেখা গেছে যে, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীরা অনেক ক্ষেত্রে ক্যালকুলেটরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। বিশেষত বিজ্ঞান এবং বাণিজ্য শাখার শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনার সময় ও পরীক্ষার মধ্যে অধিকাংশ জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধানে ক্যালকুলেটরের সাহায্য নেয়। এই প্রবণতা শিক্ষার্থীদের মৌলিক গাণিতিক দক্ষতা ও মানসিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পথে বাধা সৃষ্টি করছে বলে মনে করছে শিক্ষাবিদরা। পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের এই বিজ্ঞপ্তি তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক (Theory & Practical) উভয় ধরনের পরীক্ষার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। এতে বলা হয়েছে যে, শিক্ষার্থীদের এই সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে এবং পরীক্ষা হলে কোনো ধরনের ক্যালকুলেটর নিয়ে যাওয়া যাবে না। এই নির্দেশিকার মাধ্যমে সংসদ শিক্ষার্থীদের গাণিতিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ জোর দিচ্ছে।
নতুন নিয়ম সংক্রান্ত উচ্চ মাধ্যমিক সংসদের নোটিশ | Download PDF |
WBCHSE ওয়েবসাইট | wbchse.wb.gov.in |
শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির পরিবর্তন
এই নির্দেশিকা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে। যেখানে আগে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের গাণিতিক সমস্যার সমাধানে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করত, সেখানে এখন তাদের হাতের লেখায় এইসব সমাধান করতে হবে। এটি তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ক্যালকুলেটর নিষিদ্ধ করার মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের গাণিতিক দক্ষতা ও সমস্যার সমাধানের ক্ষমতা বাড়ানো। তবে, এর কিছু নেতিবাচক দিকও আছে। যেমন, অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মতে, এই নিষেধাজ্ঞা পরীক্ষার্থীদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে বিজ্ঞান এবং বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা যাদের জটিল হিসাব-নিকাশ করতে হয়, তারা সমস্যায় পড়তে পারে।
এই নতুন নির্দেশিকা কার্যকর করতে হলে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের বিকল্প প্রস্তুতির কথা ভাবতে হবে। যেমন, গণিত ও বিজ্ঞানের ক্লাসে শিক্ষকদের আরো বেশি করে হাতে-কলমে গাণিতিক সমস্যা সমাধান করানো, ছাত্রছাত্রীদের হাতে লেখা গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য বিশেষ পাঠ্যক্রম তৈরি করা ইত্যাদি।
এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে শিক্ষাবিদদের একটি অন্যতম লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে যুক্তি ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়ানো। পরীক্ষার সময় দ্রুত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান না করে, শিক্ষার্থীরা যখন হাতের লেখায় এইসব সমস্যা সমাধান করবে, তখন তাদের যুক্তি ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা উন্নত হবে।
এই নির্দেশিকার পর অনেক শিক্ষার্থী এই নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বিশেষত, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা মনে করছে যে, এই নিষেধাজ্ঞা তাদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে এবং পরীক্ষার সময় তাদের সমস্যায় ফেলবে। অনেক শিক্ষক ও শিক্ষাবিদ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, শিক্ষার্থীদের মৌলিক গাণিতিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তারা মনে করছেন, এই নির্দেশিকা শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে।
এই নির্দেশিকা মেনে চলার জন্য শিক্ষার্থীদের একটি নতুন প্রস্তুতি কৌশল গ্রহণ করতে হবে। তারা যদি পূর্বেই ক্যালকুলেটর নির্ভরতা ছেড়ে হাতে লেখা গাণিতিক সমস্যার সমাধানে অভ্যস্ত হয়, তবে পরীক্ষার সময় তাদের জন্য এটি সহজ হবে।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ক্যালকুলেটর নিষিদ্ধের অভিজ্ঞতা
কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গই নয়, অন্যান্য দেশেও পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর (Scientific Calculator) নিষিদ্ধ করার প্রচলন আছে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের GCSE পরীক্ষায় বেশ কয়েক বছর ধরে পরীক্ষার সময় ক্যালকুলেটর ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলাফল হিসেবে শিক্ষার্থীদের গাণিতিক দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও এই ধরনের পদক্ষেপ আশা করা হচ্ছে।
এই নতুন নির্দেশিকার আলোকে, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য একটি নতুন প্রস্তুতি কৌশল গ্রহণ করা জরুরি। তারা যদি প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে হাতে লেখা গাণিতিক সমস্যা সমাধান করে, তবে তাদের জন্য পরীক্ষার সময় এটি সহজ হয়ে উঠবে।
এই নির্দেশিকার পর অনেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবক মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। অনেকের মতে, এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হবে, আবার অন্যরা মনে করছেন যে এটি শিক্ষার মান উন্নত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এই নির্দেশিকার পর থেকে সামাজিক মাধ্যমেও এর উপর আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন, আবার অনেকেই এর বিরোধিতা করেছেন।
এছাড়াও পড়ুন: স্টেট ব্যাঙ্ক স্কলারশিপ ১০,০০০ টাকা পেতে এখনই আবেদন করুন।
উপসংহার
উচ্চ মাধ্যমিক সেমিস্টার পরীক্ষায় (HS Exam 2025) ক্যালকুলেটর ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত শিক্ষার মান উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে, এই নির্দেশিকা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবেও দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির কৌশল পরিবর্তন করে এবং হাতে লেখা গাণিতিক সমস্যার সমাধানে অভ্যস্ত হয়ে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
এই নিবন্ধটি কপিরাইট-ফ্রি এবং শিক্ষার্থীদের, শিক্ষকদের এবং অভিভাবকদের জন্য একটি সম্পূর্ণ নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করবে।